নেপালে ভারী বর্ষণ ও বন্যায় ১০১ জনের মৃত্যু

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর নিচু এলাকাগুলোতে অবিরাম বৃষ্টির কারণে বন্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, এই দুর্যোগে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০১ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
দক্ষিণ এশিয়ার বর্ষা মৌসুমে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি এবং এর ফলে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধস সাধারণ ঘটনা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের দুর্যোগের সংখ্যা ও ভয়াবহতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
শুক্রবার থেকে নেপালের পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলের বিশাল এলাকাগুলো পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে, এবং অনেক নদীতে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে, যার ফলে দেশটির মহাসড়কগুলো ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
পুলিশের মুখপাত্র ডান বাহাদুর কারকি সংবাদমাধ্যমকে জানান, "মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১০১ জন হয়েছে, এবং ৬৪ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।"
তিনি আরও বলেন, "বন্যাকবলিত এলাকায় আমাদের উদ্ধার অভিযান চলমান রয়েছে, এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।"
নেপালের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, কাঠমান্ডু উপত্যকায় শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৪০ মিলিমিটার (৯.৪ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, এটি ১৯৭০ সালের পর রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের ঘটনা।
বাগমতী নদী ও এর শাখাগুলোর পানি উপচে উঠে নদীর তীরবর্তী বাড়িঘর এবং যানবাহন ডুবিয়ে দিয়েছে।
মানুষ বুক-সমান পানি পেরিয়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছে। রোববার সকাল পর্যন্ত উদ্ধারকারী দল প্রায় ৩,৩০০ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।
উদ্ধারকাজে মোট ৩,০০০ নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে, এবং হেলিকপ্টার ও মোটরবোট ব্যবহার করে উদ্ধার কাজ পরিচালিত হচ্ছে। উদ্ধারকারীরা রবারের ভেলাগুলো ব্যবহার করে বন্যাকবলিত মানুষদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে।
ভূমিধসের কারণে রাজধানীর সঙ্গে সংযোগকারী অনেক মহাসড়ক বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে শত শত যাত্রী আটকা পড়েছে। কাঠমান্ডু ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা বিশ্বরাজ খাডকা শনিবার জানান, "প্রায় আটটি স্থানে ভূমিধসের কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।"
কাঠমান্ডু থেকে স্থানীয় বিমান পরিষেবা পুনরায় চালু হয়েছে, যদিও শুক্রবার সন্ধ্যায় বৈরি আবহাওয়ার কারণে ১৫০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছিল।
বর্ষা মৌসুমে দক্ষিণ এশিয়ায় ৭০-৮০ শতাংশ বার্ষিক বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। বর্ষার সময় নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবছরই ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনা আরও বেড়ে গেছে।
২০২৪ সালে নেপালে বৃষ্টিজনিত দুর্যোগে এখন পর্যন্ত ২৬০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
 (5).png)