৮০ জন চিকিৎসকের ১০ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আলাদা হলো শিফা ও রিফা

৮০ জন চিকিৎসকের ১০ ঘণ্টার সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পেটে এবং বুকে জোড়া লাগানো যমজ দুই বোন শিফা ও রিফাকে আলাদা করা হয়েছে। সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এক সংবাদ সম্মেলনে এই সাফল্যের ঘোষণা দেয়।
বরগুনার বেতাগী উপজেলার বাসিন্দা বাদশা ও মাহমুদা দম্পতির ১৫ মাসের সন্তান শিফা ও রিফা। তাদের আরও একটি ৬ বছরের মেয়ে রয়েছে। বাদশা ঢাকার বড়বাগে একটি মেসে থেকে গার্মেন্টসে চাকরি করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাহনুর ইসলাম জানান, ৭ সেপ্টেম্বর দুই বোনকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করা হয়। ৮০ জন চিকিৎসকের একটি দল প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে এই জটিল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন।
ডা. সাহনুর বলেন, ‘চলতি বছরের ১৪ জুন মাহমুদা শিশু দু’টিকে নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর ২১ জুন তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে পরীক্ষার পর এক মাসের ব্যবধানে চিকিৎসার জন্য আবারও আসতে বলা হয়। সবশেষ ৭ সেপ্টেম্বর তাদের অস্ত্রোপচার করে আলাদা করা হয়।’
অস্ত্রোপচারের পর দুই বোনকে আইসিইউতে রাখা হয়। ৮ সেপ্টেম্বর রিফাকে এবং ৯ সেপ্টেম্বর শিফাকে ভেন্টিলেটর থেকে মুক্ত করা হয়। তবে শিফার হার্টের সমস্যা দেখা দেওয়ায় তাকে জাতীয় হার্ট ফাউন্ডেশনে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে শিফার পিত্তনালির সংযোগ খুলে যাওয়ায় আবারও অস্ত্রোপচার করা হয়। শিফা বর্তমানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছে, কিন্তু রিফা সম্পূর্ণ সুস্থ।
শিশু দু’টির চিকিৎসার খরচ বহন করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সমাজসেবা দপ্তর, আকিজ গ্রুপ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, বিএসএমএমইউ, বারডেমের ট্রান্সফিউশান মেডিসিন বিভাগ এবং একজন দানশীল শিক্ষক ও তার পরিবার।
ডা. সাহনুর আরও জানান, ‘জোড়া লাগানো যমজদের অস্ত্রোপচার সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ। কখনো কখনো একজনকে রক্ষা করা সম্ভব হলেও দু’জনকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এই অস্ত্রোপচার ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ।’
শিফা ও রিফার বাবা বাদশা বলেন, ‘ওরা যখন মায়ের গর্ভে ছিল, তখনই চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন যে যমজ সন্তান হবে। কিন্তু জন্মের সময় জানা যায়, তারা একে অপরের সঙ্গে জোড়া লাগানো।’
 (5).png)